এইচ.এম নজরুল ইসলাম
ভৌগলিক ও ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে কক্সবাজার জেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। একই সাথে বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে এই জেলার সামরিক গুরুত্বও অত্যাধিক। অথচ সমুদ্র সীমান্তে অপরাধজগত নিয়ন্ত্রণ করছে দেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা। পরিকল্পিতভাবে অপরাধকর্মের চালিকাশক্তি হিসেবে এসব রোহিঙ্গা ব্যবহৃত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। একাধিক সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলায় অবৈধভাবে বসবাসকারী পুরনো প্রায় ৫ লক্ষধিক রোহিঙ্গার মধ্যে অধিকাংশই এই অপরাধকর্মে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। যা আমরা বহুকাল ধরে দেখে আসছি। এক শ্রেণীর প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতায় ও অনুপ্রেরণায় তারা জড়িয়ে পড়ছে অপরাধ জীবনে। একাধিকবার স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে উক্ত রোহিঙ্গাজনগোষ্ঠী তাদের অপরাধে কর্মকান্ডের কারনে। আর্থিক অনটনকে পুঁজি করে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। রোহিঙ্গারা প্রায় সবাই অস্ত্র চালাতে পারদর্শী। ওরা যদি ভারী অস্ত্র পেয়ে যায় তাহলে কক্সবাজারসহ উখিয়া ও টেকনাফের কুতুপালংসহ পাহাড়ি এলাকা দখল নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা যায়। রোহিঙ্গা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর শীর্ষ নেতাদের তৎপরতায় মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ থেকে বিশাল অংকের তহবিল বাংলাদেশে আসে। কয়েকটি এনজিও‘র মাধ্যমে মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এ টাকার একটি অংশ খরচ হয়। অবশিষ্ট টাকা যায় জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর পকেটে। আরাকান বাংলাদেশ সীমান্ত ঘিরে শুধু রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রিত ১০/১২ জঙ্গী সংঘঠন সক্রিয় রয়েছে জেলার বিভিন্ন পাহাড়ী অঞ্চলে যা স্থানীয়দের জন্য বিপদ সংকেত। মায়ানমারের বিশাল অংশের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত জড়িয়ে আছে। যা উভয় দেশের অভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সামরিক ও ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর। তেমনি রয়েছে ভাষাগত মিল। যার কারনে রোহিঙ্গারা অপরাধ করে মিশে যাচ্ছে স্থানীয়দের সাথে যা অন্ত্যন্ত দুঃখ জনক। এবার আসি কেন রোহিঙ্গাদের হাত থেকে মুক্তি চায় কক্সবাজারবাসী:
মিয়ানমার ফেরত নিবন্ধিত-অনিবন্ধিতসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গার ভারে ন্যুয়ে পড়েছে আমার-আপনার প্রিয় শহরটি! একদিকে যেমন মিয়ানমার আমাদের ইয়াবা নামক গুটিতে গুটিবাজী করে যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে প্রতিদিন, ঠিক তেমনি করে মিয়ানমার আরাকান রাজ্যে সহিংসতার নামে যে নাটকটি মঞ্চায়িত হচ্ছে সেই নাটকের দর্শক যারা আমার ভূখন্ডে আশ্রয় নিয়েছে সেইসব রোহিঙ্গাদের হাতে আজ প্রতিমূহুর্তে রক্তাক্ত হচ্ছে সবুজে ঘেরা পাহাড়-বনভূমি। শুধু কি তাই, রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে আজ অপরাধ জগত চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যাসহ এমন কোন কাজ নেই যার সাথে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত নেই। আমাদের শ্রম বাজার আজ রোহিঙ্গাদের দখলে।
রোহিঙ্গাদের কারনে বনজঙ্গল থেকে শুরু করে সমুদ্রের ঝাউবন আজ যেন কিছুই নিরাপদ নেই। নিরাপদ নেই প্রিয় মাতৃভূমি, রোহিঙ্গদের নিয়ন্ত্রণে কক্সবাজার-বান্দরবানে সক্রিয় আছে রোহিঙ্গা জঙ্গী সংগঠন আরএসও, আল ইয়াকিনসহ একাধিক উগ্রবাদী সংগঠন। জেলাজুড়ে আজ অতিরিক্ত মানুষের চাপে এক ধরনের মানবিক বিপর্যয় গঠতে যাচ্ছে। আগত রোহিঙ্গাদের সাথে আসছে মাদক ইয়াবা, এইডস্ সহ নানা ভয়ানক রোগ ইতিমধ্যে ১৬জন এইডস রোগী সনাক্ত করা হয়েছে যার ফলে চরম স্বাস্থ্য ঝূঁকিতেও পর্যটন শহর কক্সবাজার।
সম্প্রতি আগত রোহিঙ্গাদের মানবিক বিবেচনায় নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে ৪ হাজার একর জমি বরাদ্ধ দেওয়ার চিন্তা করছে প্রশাসন, কিন্তু জেলার অধিকাংশ স্থানীয় লোকজন ভূমিহীন হিসেবে যুগ যুগ পার করে যাচ্ছে অনিশ্চিত রাত্রী যাপনের মধ্য দিয়ে!! আমার কি সাংবিধানিক অধিকার নেই বাসস্থানের অধিকার দাবী করা? দ্রব্যমূল্যের দাম আজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাহিরে। হু হু করে বাড়ছে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে দাম। আমরা এই বিপর্যয় থেকে মুক্তি চাই। মুক্তি চাই রোহিঙ্গা নামক বিষফোঁটা থেকে। সরকারি সব দপ্তর আজ রোহিঙ্গা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যার কারনে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার প্রতিটি মানুষ।
জেলায় রোহিঙ্গাদের ঢল নামাতে প্রায় মাস ধরে জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট দেওয়া বন্ধ রেখেছে সরকার।
বাংলাদেশের কোন জেলায় বাবা-মাসহ একাধিক আত্মীয়-স্বজনের ভোটার আইডি, জমি-জমার কাগজ জমা দিয়ে ভোটার হতে হয়, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জাতীয় সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে হয়, পাসপোর্ট করা হয় আমার জানা নেই। তবে কক্সবাজার জেলাবাসীর এই দূর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলে না কারন রোহিঙ্গাদের কারনে আমরাও অর্ধেক রোহিঙ্গাতে পরিনত হয়ে যাচ্ছি দিন দিন প্রশাসনের চোখে!! যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে এত আয়োজন কেন?
সব মিলিয়ে ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গা জেলাজুড়ে। সীমান্তে আসার অপেক্ষায় আরও কয়েক লক্ষ। কিভাবে এতো বড় বোঝা বহন করবে কক্সবাজারবাসী? উখিয়া-টেকনাফে সাড়ে ৫ লক্ষ স্থানীয় লোকজন তার মাঝে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা তাহলে আজ স্থানীয়রা নিজ এলাকাতে সংখ্যালঘু নয় কি?
রোহিঙ্গাদের মাঝে জঙ্গীবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এটা বাংলাদেশে কক্সবাজারের নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ। অস্ত্র ও অর্থ আসছে বাইরে থেকে। এর একটা অংশ চোরাকারবারীদের হাত হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জঙ্গীদের হাতে চলে যেতে পারে। কিন্তু রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা যদি বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে তাহলে চরম অবনতি হতে বাধ্য আমার প্রিয় শহরটি। রোহিঙ্গারা পরিবেশ নষ্ট করছে। এটা চলতে দেয়া যায় না। রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে নাগরিক সমাজের সাথে মিশে গেছে। কেউ কেউ ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগ করছে। এটা খারাপ নজির। সুতরাং সময় এসেছে শক্তভাবে রোহিঙ্গা সমস্যাটা দেখা। বাংলাদেশ যেন এই সংকটকে হালকাভাবে না নেয়, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এইচ.এম নজরুল ইসলাম নির্বাহী সম্পাদক দৈনিক কক্সবাজার একাত্তর।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।